সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'ব্যাকরণ'-এর মূল বিষয়

আগের পোস্ট করা ব্লগে ব্যাকরণ আমরা কেন পড়ব সেটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। আজ কথা বলব ব্যাকরণ-এর ভিতরে কী কী থাকে তাই নিয়ে। যখন আমরা কোনো ভাষার ব্যাকরণ পড়তে যাই তখন আমরা কতগুলো বিষয় পড়ি, যেমন ধরো বাংলায়  সন্ধি, সমাস, কারক ইত্যাদি, আবার English Grammar-এ Voice ,Narration, Parts of Speech ইত্যাদি। এগুলো আলাদা আলাদা করে বুঝতে যাই বলেই আমাদের সমস্যা বেড়ে যায়।  সমস্যাগুলো কীরকম?  কীভাবে Voice change হয়? Narration কী? সন্ধি তে সূত্র মুখস্ত কেন করতে হয়? সমাসে কী যে হয় কিছুই বুঝতে পারি না? কারক কী? এইসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে । এই সমস্যাগুলো সবই কেটে যাবে যদি আমরা প্রথমেই জেনে নিই ব্যাকরণে ভাষার কী কী দিক আলোচনা করা হয়। 


সাধারণতঃ ব্যাকরণে ভাষার চারটি দিক আলোচনা করা হয়। এগুলো হল- 
ক) ধ্বনিতত্ত্ব 
খ)  রূপতত্ত্ব
গ) শব্দার্থ তত্ত্ব
ঘ) অন্বয়/ বাক্যতত্ত্ব
 এছাড়াও ব্যাকরনের চর্চায় শব্দভাণ্ডার, বাগধারা ইত্যাদি স্থান পায়। আমরা এবার এক এক করে এই চারটি দিক বিষয়ে সাধারণ একটা ধারণা তৈরি করে নেব।

ক) ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology):-এখানে আমরা কোন ভাষার মধ্যে যে সকল ধ্বনি উচ্চারণ করি তাদের উল্লেখ করা হয়। তাদের উচ্চারণের সময় আমরা কী কী বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই, কীসের সাহায্যে আমরা এই সমস্ত ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করি, কোন ধ্বনি অন্য কোন ধ্বনির সংস্পর্শে এসে কিভাবে বদলে যায় ইত্যাদির আলোচনা করা হয় ধ্বনিতত্ত্বে।  যেমন- বাংলা ভাষার ধ্বনি হল 'অ', 'আ', 'ই', 'উ', 'ক', 'খ', 'গ', 'ঘ' ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষার ধ্বনি হল- 'A', 'B','C', 'D' প্রভৃতি। এছাড়া শব্দে কোন ধ্বনি উচ্চারণের সময় বেশি শ্বাসের আঘাত দেওয়া হলে সেই বিষয়ে , কথা বলার সময় যেরকম সুর আমরা ব্যবহার করি সেই বিষয়ে প্রভৃতি বিষয়ে আমরা এখানে আলোচনা করি। 

খ) রূপতত্ত্ব(Morphology)- এখানে আমরা কোন ভাষার পদ গঠনের নিয়ম মানে শব্দ তৈরির বিষয়ে জানতে চেষ্টা করি। সহজ করে বললে ধ্বনি জুড়ে জুড়ে শব্দ কীভাবে তৈরি হয়, সেই শব্দ বাক্যে পদ হিসাবে কীভাবে বসে ইত্যাদি। 

গ) শব্দার্থতত্ত্ব(Semantics):- আপাতভাবে বললে কোনো শব্দের অর্থ কী?  একটি বাক্যে কোন শব্দ ব্যবহার হলে কী অর্থে  সেই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে? কোন শব্দের আদি অর্থ কী ছিল? পরে সেই শব্দের অর্থের কোন বদল হয়েছে কীনা? বদল হলে সেই অর্থ কী হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে শব্দার্থতত্ত্বে  আমরা আলোচনা করি। 

ঘ) বাক্যতত্ত্ব/অন্বয়(Syntax):- বাক্য কাকে বলে? বাক্য গঠনের নিয়ম কী? বাচ্য কাকে বলে? বাক্যের  নানা পদের  মধ্যে সম্পর্ক  কী রকম ? এইসব নিয়ে বাক্যতত্ত্ব আলোচনা করে। 

আমাদের ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই ভাষার যে চর্চা হয়েছে তা ব্যাকরণ ভিত্তিক। কোন দার্শনিক জ্ঞান বিতরণ না করে প্রাচীনকাল থেকেই ভাষাকে ভেঙ্গে দেখবার প্রচেষ্টা বৈয়াকরণিকগণ ( যারা ব্যাকরণ চর্চা করেন) করেছেন। আর এই ভেঙ্গে দেখবার প্রয়াসেই ব্যাকরণের জন্ম ও কোন ভাষাকে শুদ্ধভাবে অনুশীলন করার জন্য ব্যাকরণ শেখার প্রয়োজনীয়তা । তাহলে আমরা এই লেখাটি পড়ে সহজেই বুঝতে পারলাম যে, কোন ভাষার ব্যাকরণে  সেই ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনি, ধ্বনি জুড়ে তৈরি হওয়া শব্দ,  সেই শব্দ কীভাবে পদ হয়, বাক্য কীভাবে পদ জুড়ে জুড়ে তৈরি হয়, শব্দের অর্থ, বাক্যের অর্থ  প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয় । পরবর্তী লেখায় বাংলা ভাষার ব্যাকরণচর্চার একটা ছোট্ট বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-২

 আগের পর্বে আমরা আলোচনা শেষ করেছিলাম ভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং 'ব্যাকরণ' শব্দের অর্থ নিয়ে কথা বলে। এই পর্বে আমাদের আলোচনা থাকবে শিরোনামের মূল প্রশ্নের দিকে। আমরা সকলেই যেহেতু পরিবেশ থেকে শুনে এবং নিয়মিত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেরদের মাতৃভাষা বা অন্য কোন ভাষা শিখে নিতে পারি তাহলে ভাষার নিয়ম শেখার দরকার কী আদৌও আছে? উত্তর হল হ্যাঁ আছে। কিন্তু কেন?  সূত্রাকারে  কারণগুলি  যদি  উল্লেখ করি তাহলে বোধ করি বুঝতে সুবিধা হবে-  প্রথমতঃ মানুষ তার পরিবেশ থেকে যে ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয় সেটি ঐ পরিবেশে প্রচলিত আঞ্চলিক কথ্য ভাষা, অর্থাৎ মানুষের কথা বলার ভাষা। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানার মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি প্রচলিত নাও হতে পারে। তাই কোন একটি ভাষার মানুষদের পড়া ও লেখার জন্য একটিই অভিন্ন রূপ ব্যবহার করা হয়। যে রূপ সেই ভাষার সকল  ব্যবহারকারী বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারবেন। একে ব্যাকরণের ভাষায় আমরা বলি মান্য ভাষা(Standard Language)। এই ভাষার নিয়ম আমাদের জানতে হয়। এই নিয়ম জানলে সহজেই আমরা সেই ভাষাটি বুঝতে বা পড়ত...

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-১

  ব্লগের শিরোনাম দেখেই বোঝা যাছে যে আজ আমি কী বিষয়ে লিখতে চলেছি। তাও গৌরচন্দ্রিকা সেরে নিয়ে লেখার মূল বিষয়ে প্রবেশ করাই ভালো। এই লেখাটি সেইসব ছোটোদের কথা ভেবে লেখা যারা ইন্টারনেটের যুগে সবকিছুই GOOGLE SEARCH করে খুঁজে পেতে চায়। যাদের মনে অসীম প্রশ্ন। যারা কোন ভাষাকে হয়তো ভালোবাসতে পারে না ব্যাকরণ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে। আমার মনে হয়,তাদের চাহিদায় বা ভালবাসতে না পারায় কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের, আমরা যারা সহজ করে তাদের ব্যাকরণ বিষয়ে ধারণা দিতে পারি নি। তাই সহজে বই-এর বাইরে গিয়ে তাদের কাছে 'ব্যাকরণ' -এর ধারণা পৌঁছে দেবার জন্য এই লেখা। ব্যাকরণ বিষয়ে যারা খুব মনোযোগ সহকারে গবেষণা অতীতে,বর্তমানে বা ভবিষ্যতে করেছেন,করছেন বা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা আমার এই প্রচেষ্টাকে মার্জনা করে দিয়ে উৎসাহ দেবেন বলেই আমার আশা। এই লেখায় ছোটোদের একটু নতুন পদ্ধতিতে জানানোর চেষ্টা করছি যে কেন ব্যাকরণ পড়তে হয়? আজকের এই লেখাটির মূল আলোচনা করবার ক্ষেত্রটিই হল কোন মানুষ কেন ব্যাকরণ পড়বেন? বিশেষ করে বলতে গেলে মাতৃভাষার ব্যাকরণ কেন আমরা পড়ব? আমরা সকলেই নিজেদের মাতৃভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে প...