সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-১

 ব্লগের শিরোনাম দেখেই বোঝা যাছে যে আজ আমি কী বিষয়ে লিখতে চলেছি। তাও গৌরচন্দ্রিকা সেরে নিয়ে লেখার মূল বিষয়ে প্রবেশ করাই ভালো। এই লেখাটি সেইসব ছোটোদের কথা ভেবে লেখা যারা ইন্টারনেটের যুগে সবকিছুই GOOGLE SEARCH করে খুঁজে পেতে চায়। যাদের মনে অসীম প্রশ্ন। যারা কোন ভাষাকে হয়তো ভালোবাসতে পারে না ব্যাকরণ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে। আমার মনে হয়,তাদের চাহিদায় বা ভালবাসতে না পারায় কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের, আমরা যারা সহজ করে তাদের ব্যাকরণ বিষয়ে ধারণা দিতে পারি নি। তাই সহজে বই-এর বাইরে গিয়ে তাদের কাছে 'ব্যাকরণ' -এর ধারণা পৌঁছে দেবার জন্য এই লেখা। ব্যাকরণ বিষয়ে যারা খুব মনোযোগ সহকারে গবেষণা অতীতে,বর্তমানে বা ভবিষ্যতে করেছেন,করছেন বা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা আমার এই প্রচেষ্টাকে মার্জনা করে দিয়ে উৎসাহ দেবেন বলেই আমার আশা। এই লেখায় ছোটোদের একটু নতুন পদ্ধতিতে জানানোর চেষ্টা করছি যে কেন ব্যাকরণ পড়তে হয়? আজকের এই লেখাটির মূল আলোচনা করবার ক্ষেত্রটিই হল কোন মানুষ কেন ব্যাকরণ পড়বেন? বিশেষ করে বলতে গেলে মাতৃভাষার ব্যাকরণ কেন আমরা পড়ব? আমরা সকলেই নিজেদের মাতৃভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি তাহলে খামোখা কেনই বা ভাষা ব্যবহারের নিয়ম জানতে যাব? 

আলোচনার প্রথমেই 'ভাষা' বিষয়ে আমাদের বোঝাপড়াটি পরিষ্কার করে নেওয়া যাক। কোনো মানুষের ভাষা ব্যবহার করার প্রয়োজন বেঁচে থাকার তাগিদে। একজন মানুষ নিজের মনের ভাব অন্য কোনো মানুষকে  বোঝানোর জন্য ভাষার জন্ম দিয়েছে। কোনো দৈবী ক্ষমতাবলে ভাষা তৈরি হয় নি। সভ্যতার একেবারে আদিমলগ্নে মানুষ  ছবি এঁকে মনের ভাব বোঝাতো,তার কিছু সময় পরে নানাবিধ সুরে অস্পষ্ট ধ্বনির ব্যবহারে একে অন্যের সঙ্গে সংজ্ঞাপন (মনের ভাব বোঝানো) করত। ধীরে ধীরে মানুষের শ্রম তার শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তনের পাশাপাশি ধ্বনি ব্যবহারেও স্পষ্টতা নিয়ে আসে। মানুষ সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা ব্যবহারে দক্ষ হয়ে ওঠে। ভাষাও বদলাতে থাকে, একক ভাষা থেকে বর্তমানে অনেক ভাষার ব্যবহার আমরা দেখতে পাই। তবে এখানে ভাষা বিষয়ে আর আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। শুধু এটুকুই জানা থাকুক যে মানুষ নিজের মনের ভাব অন্যকে জানাতে ভাষা ব্যবহার করে।


এখন ব্যাকরণ পড়ার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করার শুরুতেই  'ব্যাকরণ' শব্দটির মানে আমরা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি, 'ব্যাকরণ' শব্দের মূল অর্থ হল 'বিশ্লেষণ'। সংস্কৃত ভাষায় এই শব্দটির বুৎপত্তি বোঝাতে বলা হয়েছে -যার সাহায্যে শব্দকে ভেঙে তার ভিতরে কী কী উপাদান আছে তা দেখানো হয় তা-ই হলো ব্যাকরণ। তবে এই অর্থ বর্তমান সময়ে অনেক পথ বেয়ে খানিকটা বদলেও গেছে। এখনকার দিনে আমরা 'ব্যাকরণ' বলতে জ্ঞানের সেই শাখাকে বুঝি যেখানে কোন ভাষা শেখা যায় ও শুদ্ধরূপে অনুশীলন করা যায়। কিন্তু যে মানুষ ভাষা ব্যবহার করতে জানেন তার এই নিয়ম শেখার কোনো দরকার কী আদৌও আছে? এই বিষয়টি নিয়েই পর্ব-২ তে আলোচনা করব। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-২

 আগের পর্বে আমরা আলোচনা শেষ করেছিলাম ভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং 'ব্যাকরণ' শব্দের অর্থ নিয়ে কথা বলে। এই পর্বে আমাদের আলোচনা থাকবে শিরোনামের মূল প্রশ্নের দিকে। আমরা সকলেই যেহেতু পরিবেশ থেকে শুনে এবং নিয়মিত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেরদের মাতৃভাষা বা অন্য কোন ভাষা শিখে নিতে পারি তাহলে ভাষার নিয়ম শেখার দরকার কী আদৌও আছে? উত্তর হল হ্যাঁ আছে। কিন্তু কেন?  সূত্রাকারে  কারণগুলি  যদি  উল্লেখ করি তাহলে বোধ করি বুঝতে সুবিধা হবে-  প্রথমতঃ মানুষ তার পরিবেশ থেকে যে ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয় সেটি ঐ পরিবেশে প্রচলিত আঞ্চলিক কথ্য ভাষা, অর্থাৎ মানুষের কথা বলার ভাষা। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানার মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি প্রচলিত নাও হতে পারে। তাই কোন একটি ভাষার মানুষদের পড়া ও লেখার জন্য একটিই অভিন্ন রূপ ব্যবহার করা হয়। যে রূপ সেই ভাষার সকল  ব্যবহারকারী বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারবেন। একে ব্যাকরণের ভাষায় আমরা বলি মান্য ভাষা(Standard Language)। এই ভাষার নিয়ম আমাদের জানতে হয়। এই নিয়ম জানলে সহজেই আমরা সেই ভাষাটি বুঝতে বা পড়ত...

'ব্যাকরণ'-এর মূল বিষয়

আগের পোস্ট করা ব্লগে ব্যাকরণ আমরা কেন পড়ব সেটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। আজ কথা বলব ব্যাকরণ-এর ভিতরে কী কী থাকে তাই নিয়ে। যখন আমরা কোনো ভাষার ব্যাকরণ পড়তে যাই তখন আমরা কতগুলো বিষয় পড়ি, যেমন ধরো বাংলায়  সন্ধি, সমাস, কারক ইত্যাদি, আবার English Grammar-এ Voice ,Narration, Parts of Speech ইত্যাদি। এগুলো আলাদা আলাদা করে বুঝতে যাই বলেই আমাদের সমস্যা বেড়ে যায়।  সমস্যাগুলো কীরকম?  কীভাবে Voice change হয়? Narration কী? সন্ধি তে সূত্র মুখস্ত কেন করতে হয়? সমাসে কী যে হয় কিছুই বুঝতে পারি না? কারক কী? এইসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে । এই সমস্যাগুলো সবই কেটে যাবে যদি আমরা প্রথমেই জেনে নিই ব্যাকরণে ভাষার কী কী দিক আলোচনা করা হয়।  সাধারণতঃ ব্যাকরণে ভাষার চারটি দিক আলোচনা করা হয়। এগুলো হল-  ক) ধ্বনিতত্ত্ব  খ)  রূপতত্ত্ব গ) শব্দার্থ তত্ত্ব ঘ) অন্বয়/ বাক্যতত্ত্ব  এছাড়াও ব্যাকরনের চর্চায় শব্দভাণ্ডার, বাগধারা ইত্যাদি স্থান পায়। আমরা এবার এক এক করে এই চারটি দিক বিষয়ে সাধারণ একটা ধারণা তৈরি করে নেব। ক) ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology):- এখানে আমরা কোন ভাষার মধ্যে যে সকল ধ্বনি উচ্চারণ ...