সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-২

 আগের পর্বে আমরা আলোচনা শেষ করেছিলাম ভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং 'ব্যাকরণ' শব্দের অর্থ নিয়ে কথা বলে। এই পর্বে আমাদের আলোচনা থাকবে শিরোনামের মূল প্রশ্নের দিকে। আমরা সকলেই যেহেতু পরিবেশ থেকে শুনে এবং নিয়মিত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেরদের মাতৃভাষা বা অন্য কোন ভাষা শিখে নিতে পারি তাহলে ভাষার নিয়ম শেখার দরকার কী আদৌও আছে? উত্তর হল হ্যাঁ আছে। কিন্তু কেন? 

সূত্রাকারে  কারণগুলি  যদি  উল্লেখ করি তাহলে বোধ করি বুঝতে সুবিধা হবে-

 প্রথমতঃ মানুষ তার পরিবেশ থেকে যে ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয় সেটি ঐ পরিবেশে প্রচলিত আঞ্চলিক কথ্য ভাষা, অর্থাৎ মানুষের কথা বলার ভাষা। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানার মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি প্রচলিত নাও হতে পারে। তাই কোন একটি ভাষার মানুষদের পড়া ও লেখার জন্য একটিই অভিন্ন রূপ ব্যবহার করা হয়। যে রূপ সেই ভাষার সকল  ব্যবহারকারী বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারবেন। একে ব্যাকরণের ভাষায় আমরা বলি মান্য ভাষা(Standard Language)। এই ভাষার নিয়ম আমাদের জানতে হয়। এই নিয়ম জানলে সহজেই আমরা সেই ভাষাটি বুঝতে বা পড়তে বা লিখতে পারব।

দ্বিতীয়তঃ একটি ভাষার আঞ্চলিক কথা বলার রূপটি মানুষ সহজেই শিখে ফেললেও লেখার ভাষার রূপটি শিখতে পারে না। এই লেখার ভাষা শেখার জন্য আমাদের সেই ভাষার ব্যাকরণ জানতে হয় কারণ ব্যাকরণের আলোচনায় শব্দের ব্যবহার, বাক্য গঠন করার নিয়ম প্রভৃতি শেখা যায়। এর মাধ্যমে নির্ভুল ভাষা ব্যবহার করতে পারা সম্ভব। ।   

তৃতীয়তঃ পরিবেশের মাধ্যমে মানুষ, তার মাতৃভাষার প্রাথমিক নিয়ম-কানুন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও লেখাপড়ার সমস্ত কাজে যথাযথভাবে মাতৃভাষা ব্যবহার করতে গেলে তাকে ব্যাকরণের নিয়মগুলি সম্পর্কে জানতেই হবে।

মূলত এই তিনটি কারণে একজন মানুষের কোন ভাষার ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন। এমনকি  মাতৃভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিশেষে আমরা বলতেই পারি যে, মাতৃভাষা সহ যেকোন ভাষাকে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ব্যবহার করবার তাগিদেই একজন মানুষকে 'ব্যাকরণ' শিক্ষা লাভ করতে হয়।  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'ব্যাকরণ'-এর মূল বিষয়

আগের পোস্ট করা ব্লগে ব্যাকরণ আমরা কেন পড়ব সেটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। আজ কথা বলব ব্যাকরণ-এর ভিতরে কী কী থাকে তাই নিয়ে। যখন আমরা কোনো ভাষার ব্যাকরণ পড়তে যাই তখন আমরা কতগুলো বিষয় পড়ি, যেমন ধরো বাংলায়  সন্ধি, সমাস, কারক ইত্যাদি, আবার English Grammar-এ Voice ,Narration, Parts of Speech ইত্যাদি। এগুলো আলাদা আলাদা করে বুঝতে যাই বলেই আমাদের সমস্যা বেড়ে যায়।  সমস্যাগুলো কীরকম?  কীভাবে Voice change হয়? Narration কী? সন্ধি তে সূত্র মুখস্ত কেন করতে হয়? সমাসে কী যে হয় কিছুই বুঝতে পারি না? কারক কী? এইসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে । এই সমস্যাগুলো সবই কেটে যাবে যদি আমরা প্রথমেই জেনে নিই ব্যাকরণে ভাষার কী কী দিক আলোচনা করা হয়।  সাধারণতঃ ব্যাকরণে ভাষার চারটি দিক আলোচনা করা হয়। এগুলো হল-  ক) ধ্বনিতত্ত্ব  খ)  রূপতত্ত্ব গ) শব্দার্থ তত্ত্ব ঘ) অন্বয়/ বাক্যতত্ত্ব  এছাড়াও ব্যাকরনের চর্চায় শব্দভাণ্ডার, বাগধারা ইত্যাদি স্থান পায়। আমরা এবার এক এক করে এই চারটি দিক বিষয়ে সাধারণ একটা ধারণা তৈরি করে নেব। ক) ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology):- এখানে আমরা কোন ভাষার মধ্যে যে সকল ধ্বনি উচ্চারণ ...

"ব্যাকরণ কেন পড়ব?" পর্ব-১

  ব্লগের শিরোনাম দেখেই বোঝা যাছে যে আজ আমি কী বিষয়ে লিখতে চলেছি। তাও গৌরচন্দ্রিকা সেরে নিয়ে লেখার মূল বিষয়ে প্রবেশ করাই ভালো। এই লেখাটি সেইসব ছোটোদের কথা ভেবে লেখা যারা ইন্টারনেটের যুগে সবকিছুই GOOGLE SEARCH করে খুঁজে পেতে চায়। যাদের মনে অসীম প্রশ্ন। যারা কোন ভাষাকে হয়তো ভালোবাসতে পারে না ব্যাকরণ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে। আমার মনে হয়,তাদের চাহিদায় বা ভালবাসতে না পারায় কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের, আমরা যারা সহজ করে তাদের ব্যাকরণ বিষয়ে ধারণা দিতে পারি নি। তাই সহজে বই-এর বাইরে গিয়ে তাদের কাছে 'ব্যাকরণ' -এর ধারণা পৌঁছে দেবার জন্য এই লেখা। ব্যাকরণ বিষয়ে যারা খুব মনোযোগ সহকারে গবেষণা অতীতে,বর্তমানে বা ভবিষ্যতে করেছেন,করছেন বা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা আমার এই প্রচেষ্টাকে মার্জনা করে দিয়ে উৎসাহ দেবেন বলেই আমার আশা। এই লেখায় ছোটোদের একটু নতুন পদ্ধতিতে জানানোর চেষ্টা করছি যে কেন ব্যাকরণ পড়তে হয়? আজকের এই লেখাটির মূল আলোচনা করবার ক্ষেত্রটিই হল কোন মানুষ কেন ব্যাকরণ পড়বেন? বিশেষ করে বলতে গেলে মাতৃভাষার ব্যাকরণ কেন আমরা পড়ব? আমরা সকলেই নিজেদের মাতৃভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে প...