আগের পর্বে আমরা আলোচনা শেষ করেছিলাম ভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং 'ব্যাকরণ' শব্দের অর্থ নিয়ে কথা বলে। এই পর্বে আমাদের আলোচনা থাকবে শিরোনামের মূল প্রশ্নের দিকে। আমরা সকলেই যেহেতু পরিবেশ থেকে শুনে এবং নিয়মিত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেরদের মাতৃভাষা বা অন্য কোন ভাষা শিখে নিতে পারি তাহলে ভাষার নিয়ম শেখার দরকার কী আদৌও আছে? উত্তর হল হ্যাঁ আছে। কিন্তু কেন?
সূত্রাকারে কারণগুলি যদি উল্লেখ করি তাহলে বোধ করি বুঝতে সুবিধা হবে-
প্রথমতঃ মানুষ তার পরিবেশ থেকে যে ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয় সেটি ঐ পরিবেশে প্রচলিত আঞ্চলিক কথ্য ভাষা, অর্থাৎ মানুষের কথা বলার ভাষা। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানার মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি প্রচলিত নাও হতে পারে। তাই কোন একটি ভাষার মানুষদের পড়া ও লেখার জন্য একটিই অভিন্ন রূপ ব্যবহার করা হয়। যে রূপ সেই ভাষার সকল ব্যবহারকারী বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারবেন। একে ব্যাকরণের ভাষায় আমরা বলি মান্য ভাষা(Standard Language)। এই ভাষার নিয়ম আমাদের জানতে হয়। এই নিয়ম জানলে সহজেই আমরা সেই ভাষাটি বুঝতে বা পড়তে বা লিখতে পারব।
দ্বিতীয়তঃ একটি ভাষার আঞ্চলিক কথা বলার রূপটি মানুষ সহজেই শিখে ফেললেও লেখার ভাষার রূপটি শিখতে পারে না। এই লেখার ভাষা শেখার জন্য আমাদের সেই ভাষার ব্যাকরণ জানতে হয় কারণ ব্যাকরণের আলোচনায় শব্দের ব্যবহার, বাক্য গঠন করার নিয়ম প্রভৃতি শেখা যায়। এর মাধ্যমে নির্ভুল ভাষা ব্যবহার করতে পারা সম্ভব। ।
তৃতীয়তঃ পরিবেশের মাধ্যমে মানুষ, তার মাতৃভাষার প্রাথমিক নিয়ম-কানুন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও লেখাপড়ার সমস্ত কাজে যথাযথভাবে মাতৃভাষা ব্যবহার করতে গেলে তাকে ব্যাকরণের নিয়মগুলি সম্পর্কে জানতেই হবে।
মূলত এই তিনটি কারণে একজন মানুষের কোন ভাষার ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন। এমনকি মাতৃভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিশেষে আমরা বলতেই পারি যে, মাতৃভাষা সহ যেকোন ভাষাকে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ব্যবহার করবার তাগিদেই একজন মানুষকে 'ব্যাকরণ' শিক্ষা লাভ করতে হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন